Chairman Message

Chairmen's Message

প্রিয় শেয়ার হোল্ডারগণ

পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ আমার ও কোম্পানির পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা নিন। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মতবিনিময়ের সুযোগ দেয়ার জন্য আপনাদের ও উপকারভোগীদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

 

আপনারা সকলেই এই কোম্পানির অব্যবস্থাপনা ও মিডিয়া ট্রায়াল এর বিষয়টি অবগত। আমি মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১লা জুন ২০২০ থেকে পরিচালনা পর্ষদ ও কোম্পানির কর্মীদের নিয়ে উত্তরণের প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। একদা অত্যন্ত সফল কোম্পানি আজ টিকে থাকার সংগ্রামে লিপ্ত। ঋণ প্রদানে স্বেচ্ছাচারিতা, জামানত ছাড়াই ঋণ, সুযোগ বুঝে ঋণগ্রহীতার ঋণ পরিশোধ না করা, পরিচালনা পর্ষদের অনুমতি ছাড়াই ঋণ কিংবা নির্দেশিত জামানত না নেয়া এর মূল কারণ।

 

এছাড়াও এই অবস্থার জন্য ট্যাক্স সংগ্রহ করা হলেও জমা না দেয়া প্রায় ৫৪ কোটি টাকা; ভুতুড়ে ৬৭ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহের কমিশন অনিয়ম ও দুর্নীতিকে দায়ী করা যায়।অপরপক্ষে, আমানতকারীদের আতঙ্কিত হয়ে একই সাথে সমুদয় অর্থ ফেরত চাওয়া গোদের ওপর বিষফোঁড়া। সর্বোপরি কর্মীদের অভিভাবকহীন অবস্থায় আতঙ্কিত হয়ে অনিয়ন্ত্রিত চেক ইস্যু মামলার সূত্রপাত ঘটিয়ে একদিকে যেমন সুনাম ক্ষুন্ন অপরদিকে মামলাতঙ্কে পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মীরা দিশেহারা। এমনই পেক্ষাপটে আমার হাল ধরা।

 

অতঃপর ঋণগ্রহীতাদের একাউন্ট ফ্রিজ ও কোভিড এই প্রতিষ্ঠানের উপর মরণ কামড়। তবে ইতোমধ্যে ঋণগ্রহীতাদের সাথে মুখোমুখি সভার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ ও বকেয়া কিস্তি আদায়ের মাধ্যমে প্রায় ঋণ হতে মোট আদায় করা হয়েছে ১৬৬ কোটি টাকা, নতুন আমানত সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা, আসল ও সুদ সহ মেয়াদী আমানত বাবদ ১৮৯২ জন গ্রাহককে ১১৬ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে এবং সর্বমোট ৫৩২টি আমানত হিসাবের ৮৬ কোটি টাকা সম্পূর্ণভাবে নগদায়ন করা হয়েছে ও ১৬০০ কোটি টাকার আমানত নবায়ন করা হয়েছে।

 

২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কর্তিত ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ বকেয়া ছিল ৫৪ কোটি টাকা।যার সাথে ২০২০ সালের ২২ কোটি টাকা যুক্ত হয়ে মোট প্রদেয় দাড়ায় ৭৬ কোটি টাকা।প্রায় ১ কোটি টাকা জমা দেয়ার পর ৩১.১২.২০২০ সালে মোট বকেয়া দাড়ায় ৭৫ কোটি টাকা। আমার যোগদানের পর থেকে ট্যাক্স ও ভ্যাট বাবদ ৩৫ কোটি টাকা কর্তন করা হয় যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি টাকা জমা দেয়া হয়। উল্লেখ্য যে, তারল্য সংকট, আমানতকারী গ্রাহকদের চাহিদা মত টাকা প্রদান করা এবং সুদসহ আমানত নবায়ন করার জন্য আমরা সম্পূর্ণ টাকা জমা দিতে পারি নাই। কিন্তু পরিচালনা ব্যয় বাবদ কর্তিত ভ্যাট ও ট্যাক্স এর সম্পূর্ণ অর্থ জমা দেয়া হয়েছে।২০২০ সালে অর্থ আদায়ের জন্য মোট ১৮টি মামলা করা হয় এবং আমার যোগদানের পর থেকে মোট ৫৩টি মামলা নতুন করে দায়ের করা হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের ১৮১টি মামলা চলমান রয়েছে যার মূল্য ৯২৯ কোটি টাকা।২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ২৪টি এবং আমি যোগদানের পর থেকে ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে মহামান্য উচ্চ আদালতের ১১টি মামলাসহ সর্বমোট ৪৫টি মামলা চলমান রয়েছে যার মূল্য ১৫৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালে মীমাংসিত মামলার সংখ্যা ২টি যার মূল্য ০.৬৮ কোটি টাকা।উপরন্তু আমরা আমাদের সকল সেবাগ্রহীতাদের আস্থা অর্জন ও সেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিপদের মুখে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড সেবা প্রদান অব্যাহত রাখার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কর্মীরা প্রশংসারযোগ্য। কোভিড-১৯ এ আমরা আমাদের কোন কর্মচারীকে ছাটাই করি নাই। অর্থ সাশ্রয় করার জন্য আমরা আমাদের ধানমন্ডি অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছি। জুন ০১, ২০২০ থেকে আমরা এ পর্যন্ত ৫৬টি ঋণ সম্পূর্ণ আদায় করেছি যার মূল্যমান ১২৮ কোটি টাকা।

 

অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড, যৌথ স্টক সংস্থাগুলি এবং ফার্মগুলির রেজিস্টার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অন্যান্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষকে তাদের ধৈর্য ও দিক নির্দেশনার জন্য ধন্যদার্হ্য।

 

ইতিমধ্যে আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ দীর্ঘদিন বন্ধের পর পুনরায় শুরু করেছি।মহামান্য আদালত কর্তৃক মনোনীত সম্মানিত ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক সার্বক্ষণিক আমাকে তাদের মূল্যবান সময় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা দিচ্ছেন। পরিচালনা পর্ষদের সদস্যগণের সহায়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখে আমরা ইতিমধ্যে ঋণ প্রদান প্রক্রিয়ায় ফিরে এসেছি এবং অচিরেই সেবা গ্রহীতাদের পূর্ণ আস্থায় ফিরে আসার আশা রাখি।

 

 

সকলকে ধন্যবাদ।

 

মোঃ নজরুল ইসলাম খান

চেয়ারম্যান